পৌরনীতি ও নাগরিকতা হচ্ছে নবম-দশম শ্রেণী অর্থাৎ এসএসসি’র পৌরনীতি বই এর ১ম অধ্যায়। পৌরনীতি ও নাগরিকতা অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
পৌরনীতি ও নাগরিকতা অধ্যায়ের সৃজনশীল
১. সৈয়দ শফিক আহমেদ তার পুত্র সৈয়দ সৈকত আহমেদকে বিদ্যালয়ে প্রথম, শ্রেণিতে ভর্তির জন্য নিয়ে আসেন। প্রধান শিক্ষক সৈকত আহমেদের মাতার নাম ভর্তি বহিতে লিপিবদ্ধ করতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছেলে আমার পরিচয়ে পরিচিত হবে। প্রধান শিক্ষক বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পর তিনি সৈকত আহমেদের মায়ের নামটি ভর্তি বহিতে লিপিবদ্ধ করেন।
ক. পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
খ. খুলনা রাষ্ট্র নয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. সৈয়দ শফিক আহমেদের সন্তান তার পরিচয়ে পরিচিত হওয়া কোন শ্রেণিভুক্ত পরিবারকে বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “সৈয়দ আহমেদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা পরিবারের একটি আংশিক কাজ মাত্র।” – উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Civics.
খ. রাষ্ট্র হলো একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
একটি রাষ্ট্রের চারটি উপাদান অপরিহার্য। যথা- ১. জনসমষ্টি, ২. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, ৩, সরকার ও ৪. সার্বভৌমত্ব। এ উপাদানগুলোর কোনোটি যদি কোনো অঞ্চলের মধ্যে বিদ্যমান না থাকে, তবে তাকে রাষ্ট্র বলা যাবে না। সে অর্থে খুলনা রাষ্ট্র নয়। কারণ খুলনার জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও সরকারব্যবস্থা থাকলেও সার্বভৌমত্ব নেই। আর সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা অপরিহার্য উপাদান এবং প্রধান শর্ত। তাই খুলনা রাষ্ট্র নয়।
গ. সৈয়দ শফিক আহমেদের সন্তান তার পরিচয়ে পরিচিত হওয়া মূলত বংশ গণনা ও নেতৃত্বের ভিত্তিতে গঠিত পিতৃতান্ত্রিক পরিবারকেই বোঝায়।
বাংলাদেশের পরিবার মূলত পিতৃতান্ত্রিক। এ ধরনের পরিবারের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা পিতার ওপর ন্যস্ত থাকে। এ ধরনের পরিবারে বংশ পরিচয় পিতার সূত্রে নির্ধারিত হয়। পিতাই এ ধরনের পরিবারে নেতৃত্ব দেন এবং পরিবার পরিচালনার যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যেমন- সন্তান কোন বিদ্যালয়ে পড়বে, কোন পেশায় উপযোগী করে তাকে গড়ে তোলা হবে, সন্তানাদির বিবাহ-শাদির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ঘরবাড়ি নির্মাণ, জমিজমা ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি। এ ধরনের পরিবারে সম্পত্তির উত্তরাধিকারও পৈতৃক সূত্রে বর্তায়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় উদার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কিছু কিছু পরিবারে মাতার ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব লক্ষ করা যায়। যদিও পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হয় পিতা।
ঘ. সৈয়দ আহমেদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা পরিবারের শিক্ষামূলক কাজ। এছাড়াও পরিবারের বেশকিছু কার্যাবলি রয়েছে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো-
১. জৈবিক কাজ : সন্তান জন্মদান ও লালন-পালন করা পরিবারের অন্যতম কাজ। পরিবারের এ ধরনের কাজকে জৈবিক কাজ বলে।
২. অর্থনৈতিক কাজ পরিবারের সদস্যদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি চাহিদা পূরণের দায়িত্ব পরিবারের। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্নভাবে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে এসব চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এছাড়াও পরিবার আমাদের সকল প্রকার অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করে থাকে।
৩. মনস্তাত্ত্বিক কাজ : পরিবার মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের মানসিক চাহিদা পূরণ করে। নিজের সুখ- দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে ভাগাভাগি করে প্রশান্তি লাভ করা যায়। তাছাড়া পরিবার থেকে শিশু উদারতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা প্রভৃতি গুণগুলোর শিক্ষালাভ করে, যা তাদের মানসিক দিককে সমৃদ্ধ করে।
৪. বিনোদনমূলক কাজ : পরিবারের সদস্যদের সাথে গল্প-গুজব, হাসি-ঠাট্টা, গান-বাজনা, টিভি দেখা, বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা বিনোদন লাভ করে। পরিবারের সদস্যদের সর্বাধিক কল্যাণ সাধনে পরিবারের এসব কাজের গুরুত্ব অপরিসীম।
৫. রাজনৈতিক কাজ : পারিবারিক শিক্ষা ও নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে পরিবারেই শিশুর রাজনৈতিক শিক্ষা শুরু হয়। এ শিক্ষা পরবর্তীকালে রাষ্ট্রীয় জীবনে কাজে লাগে। এছাড়া বড়দের রাজনৈতিক আলোচনা শুনে ও সে আলোচনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিশু রাজনৈতিক সচেতন হয়ে ওঠে।
উপরিউক্ত আলোচনায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, পরিবারের বহু কাজ রয়েছে, আর শিক্ষামূলক কাজ তার একটি অংশ মাত্র। সুতরাং সৈয়দ আহমেদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা পরিবারের আংশিক কাজ মাত্র।
২. ‘ক’ তার বাবা-মায়ের সাথে ঢাকার কমলাপুরে বসবাস করে। ক’-এর পিতা তাদের পরিবারের প্রধান এবং তার ক্ষমতা ও কর্তৃত্বে সব কাজ সম্পাদিত হয়। কিন্তু ‘খ’-এর পরিবারে তার মা তাদের পরিবারের প্রধান এবং তার পিতার তুলনায় মা বেশি ক্ষমতার অধিকারী।
ক. পরিবার বলতে কী বোঝায়?
খ. বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদটি ব্যাখ্যা কর।
গ. কর্তত্বের ভিত্তিতে উদ্দীপকের পরিবারগুলোর বর্ণনা দাও।
ঘ. তুমি কি মনে কর, ‘খ’-এর পরিবারের মতো পরিবার বাংলাদেশে খুবই কম হওয়ার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এক বা একাধিক পুরুষ ও মহিলা, তাদের সন্তানাদি, পিতামাতা এবং অন্যান্য পরিজন নিয়ে যে সংগঠন গড়ে ওঠে তাকে পরিবার বলে।
খ. বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদ হলো ঐশী মতবাদ। এ মতবাদ অনুসারে, বিধাতা বা স্রষ্টা স্বয়ং রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন এবং রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তিনিই শাসক প্রেরণ করেন। এজন্য এ মতবাদকে বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদ বলা হয়। এ মতবাদে আরও বলা হয়, শাসক স্রষ্টার প্রেরিত। তাই শাসক কেবল বিধাতার নিকট দায়ী, জনগণের কাছে নয়। আর শাসক যেহেতু স্রষ্টার নির্দেশে কাজ করেন, তাই শাসকের নির্দেশ অমান্য করার অর্থ বিধাতার নির্দেশ অমান্য করা। এটি রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সবচেয়ে পুরানো মতবাদ।
গ. উদ্দীপকে দুটি পরিবার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ‘ক’-এর পরিবারে পিতা প্রধান। পরিবারের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব তার হাতে ন্যস্ত। অপরদিকে, ‘খ’-এর পরিবারে বাবার তুলনায় মা অধিক ক্ষমতার অধিকারী। কর্তৃত্বের ভিত্তিতে পরিবার দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা- পিতৃপ্রধান বা পিতৃতান্ত্রিক এবং মাতৃপ্রধান বা মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। পরিবারের সামগ্রিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ভার পুরুষ সদস্য অর্থাৎ পিতা, স্বামী কিংবা বয়স্ক ব্যক্তির ওপর ন্যস্ত থাকলে এ ধরনের পরিবারকে পিতৃপ্রধান পরিবার বলে। এ ধরনের পরিবারে বংশ পরিচয় প্রধানত পুরুষ সূত্র দ্বারা নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশের সমাজে এ ধরনের পরিবার সর্বত্রই বিরাজমান। আবার যে পরিবারে সামগ্রিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ভাৱ মায়ের হাতে অর্থাৎ মা-ই যখন ওই পরিবারের সর্বময় কর্তা এ ধরনের পরিবারকে মাতৃপ্রধান পরিবার বলে।
সুতরাং আমরা দেখতে পাই, কর্তৃত্বের ভিত্তিতে ‘ক’-এর পরিবার পিতৃতান্ত্রিক এবং ‘খ’-এর পরিবার মাতৃতান্ত্রিক।
ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি ‘খ’-এর পরিবারের মতো পরিবার অর্থাৎ মাতৃপ্রধান পরিবার বাংলাদেশে খুবই কম —উক্তিটি যথার্থ।
কোনো পরিবারের ক্ষমতা ও নেতৃত্ব যদি মাতা, স্ত্রী বা বয়স্ক মেয়েদের ওপর ন্যস্ত থাকে তাহলে সে পরিবারকে মাতৃপ্রধান পরিবার বলে।
মাতৃপ্রধান পরিবারে মাতাই পরিবারের প্রধান। এ অবস্থায় নেতৃত্ব ও সম্পত্তির মালিকানা মেয়েদের হাতে ন্যস্ত এবং উত্তরাধিকারসূত্রে মাতার নেতৃত্ব ও সম্পত্তি মেয়েদের ওপর বর্তায়। মাতা ক্ষমতার অধিকার হলেও পুরুষ সহায়তা করে থাকে। আমাদের দেশের ময়মনসিংহ জেলার গারো সমাজে এ ধরনের পরিবার দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বাংলাদেশের পরিবার মূলত পিতৃপ্রধান। তবে শহরের কিছু উচ্চশিক্ষিত ও উদার দৃষ্টিসম্পন্ন পরিবারে সমতার নীতি লক্ষ করা যায়। এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর মতামতের গুরুত্ব দেন। কিন্তু পরিবার পরিচালনা ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আজও পুরুষের ওপর ন্যস্ত। এ পরিবারে সন্তানরা পিতার বংশ পরিচয়ে পরিচিত হন। এ পরিবারে সংসারের যাবতীয় সিদ্ধান্ত পুরুষরাই গ্রহণ করে থাকে। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ‘খ’-এর পরিবারের মতো পরিবার অর্থাৎ মাতৃপ্রধান পরিবার বাংলাদেশে খুবই কম।
৩. সাব্বির তার মা-বাবাসহ শহরে বাস করে। তাদের সাথে তার দাদা-দাদিও থাকেন। তার মা-বাবা দুজনেই সরকারি চাকরি করেন। মা- বাবা তার পড়াশোনার ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন এবং বন্ধের দিনে তাকে সাথে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান। গ্রীষ্মের ছুটিতে সাব্বির গ্রামে তার বন্ধু রফিকের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দেখতে পায় রফিকের মা-বাবা বাঁশ-বেতের ঝুড়ি তৈরি করছেন। বাড়ির পাশেই খামারে হাঁস-মুরগি লালন-পালন করছেন। এভাবে তাদের সংসার বেশ ভালোভাবেই চলছে।
ক. সমাজ কাকে বলে?
খ. পরিবারকে শাশ্বত বিদ্যালয় বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সাব্বিরের পরিবার কোন ধরনের? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “সাব্বির ও রফিকের পরিবারের কাজের ধরন ভিন্ন” – উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যখন কোনো সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠী সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্রিত হয়ে বসবাস করে তখন তাকে সমাজ বলে।
খ. শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার শুরু পরিবারেই হয় বলে পরিবারকে শাশ্বত বিদ্যালয় বলা হয়। শিশুরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার পূর্বেই পরিবারে বর্ণমালার সাথে পরিচিত হয়। তাছাড়া বাবা-মা, ভাইবোন ও পরিবারের অন্য সদস্যদের পারস্পরিক সহায়তায় সততা, শিষ্টাচার, নিয়মানুবর্তিতা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলির শিক্ষালাভের সুযোগ পরিবারেই ঘটে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সাব্বিরের পরিবার কাঠামোগত দিক থেকে একটি যৌথ পরিবার।
পারিবারিক কাঠামোর ভিত্তিতে বড় পরিবার বা বর্ধিত পরিবারকে যৌথ পরিবার বলা হয়। যৌথ পরিবারে মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি, চাচা-চাচি ও অন্যান্য পরিজন একত্রে বাস করে। এ পরিবারের বন্ধন মূলত রক্তের সম্পর্কের মাধ্যমে গড়ে ওঠে। এই জাতীয় পরিবারে দাদা, বাবা ও তার পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ তিন প্রজন্ম একত্রে বসবাস করে বলে কখনো কখনো একে তিন পুরুষের পরিবারও বলা হয়।
উদ্দীপকে সাব্বিরের পারিবারিক কাঠামোতে আমরা দেখতে পাই যে, সে তার মা-বাবাসহ শহরে বাস করে। এছাড়াও তাদের সাথে তার দাদা-দাদিও থাকেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, সাব্বিরের পরিবারে তিন পুরুষের পারিবারিক বন্ধন রয়েছে।
আর তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সাব্বিরের পরিবারটি হলো একটি যৌথ পরিবার।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত প্রেক্ষিতে সাব্বির ও রফিকের কাজের ধরন ভিন্ন।
যেসব কাজের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা হয়, সেগুলোকেই পরিবারের অর্থনৈতিক কাজ বলে। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্নভাবে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করে থাকে। উদ্দীপকে সাব্বিরের পরিবারে তার বাবা-মা দুজনেই সরকারি চাকরি করে পরিবারের অর্থসংস্থান করেন। তাই এটি পরিবারের অর্থনৈতিক কাজ। আর রফিকের মা-বাবা বাঁশ-বেতের ঝুড়ি তৈরি ও বাড়ির পাশে খামারে হাঁস-মুরগি লালন-পালনও তেমনিভাবে অর্থনৈতিক কাজের উদাহরণ। অপরদিকে, সাব্বিরের পরিবারে আরও দুটি কাজের প্রতিফলন দেখা যায়। এক্ষেত্রে সাব্বিরের মা-বাবা পড়াশোনার ক্ষেত্রে নিয়মিত পড়াশোনার ব্যাপারে খোঁজখবর রাখেন যা পরিবারের শিক্ষামূলক কাজ। বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা, নৈতিকতাসহ বিভিন্ন মানবীয় গুণাবলির শিক্ষাসহ সমগ্র শিক্ষাজীবনে পরিবারের সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তাই পরিবারের শিক্ষামূলক কাজ। এজন্য পরিবারকে শাশ্বত বিদ্যালয় হিসেবে অভিহিত করা হয়। সাব্বিরের বাবা-মা তাকে বন্ধের দিন সাথে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান। আর এরূপে পরিবারের সদস্যদের সাথে গল্প-গুজব, গান-বাজনা, টিভি দেখা, ঘুরতে যাওয়াসহ বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা করা হলো পরিবারের বিনোদনমূলক কাজ। উদ্দীপকে সাব্বিরের পরিবারে আমরা অর্থনৈতিক, শিক্ষামূলক ও বিনোদনমূলক কাজের প্রতিফলন দেখতে পেলেও রফিকের পরিবারে কেবল অর্থনৈতিক কাজে সীমাবদ্ধ। তাই উক্ত দুই পরিবারের কাজের ধরনে কিছুটা বৈচিত্র্য ও ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। আর তাই বলা যায়, সাব্বির ও রফিকের পরিবারের কাজের ধরন ভিন্ন।
৪. পবিত্র ও প্রদীপ নবম শ্রেণির ছাত্র। পবিত্র’র বাবা সংসারের ব্যবস্থাপক হিসেবে মায়ের বাড়িতে বহুকাল যাবৎ বাস করছেন। পবিত্র মায়ের পরিচয়ে পরিচিত। এজন্য সে গর্ববোধ করে। অন্যদিকে, প্রদীপ তার বাবার বংশ পরিচয়ে পরিচিত এবং পরিবারের সকল সিদ্ধান্ত বাবা দিয়ে থাকেন।
ক. সমাজ কাকে বলে?
খ. নাগরিকতার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. পবিত্র কোন শ্রেণির পরিবারে বাস করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত পরিবারদ্বয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. একদল জনগোষ্ঠী যখন সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে, তখন তাকে সমাজ বলা হয়।
খ. পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়টি নাগরিকদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে। যেমন- অতীতে নাগরিকতা কীভাবে নির্ণয় করা হতো, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য কেমন ছিল, বর্তমানের নাগরিকের মর্যাদা কীরূপ- এসবের ওপর ভিত্তি করে ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বিষয়টি ভবিষ্যৎ নাগরিক জীবনের দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এজন্য পৌরনীতি ও নাগরিকতাকে নাগরিকতাবিষয়ক বিজ্ঞানও বলা হয়।
গ. পবিত্র মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে বাস করে।
মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে মায়ের বংশ পরিচয়ে সন্তানেরা পরিচিত হয় এবং মা পরিবারের নেতৃত্ব দেন। পরিবারের সামগ্রিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব মাতা বা স্ত্রীর ওপর নাস্ত থাকে। এছাড়া এ ধরনের পরিবারে মেয়েরাই শুধুমাত্র সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়ে থাকে। সাধারণত এরূপ পরিবারে পাত্র পরিবার ছেড়ে পাত্রীর পরিবারভুক্ত হয়ে বসবাস করে। আমাদের দেশের গারোদের মধ্যে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, পবিত্র’র বাবা সংসারের ব্যবস্থাপক হিসেবে মায়ের বাড়িতে বহুকাল যাবৎ বাস করছেন এবং তিনি মায়ের পরিচয়ে পরিচিত। যা মাতৃতান্ত্রিক পরিবারকে নির্দেশ করে। অতএব মা নেতৃত্বদানকারী এবং মায়ের দিক থেকে সন্তানের বংশ পরিচয়, এটি মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের কাঠামো। তাই বলা যায়, পবিত্র মাতৃতান্ত্রিক শ্রেণির পরিবারে বাস করে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পবিত্র’র বাবা সংসারের ব্যবস্থাপক হিসেবে মায়ের বাড়িতে বহুকাল যাবৎ বাস করছেন। পবিত্র মায়ের পরিচয়ে পরিচিত, যা মাতৃতান্ত্রিক পরিবারকে নির্দেশ করে। এ ধরনের পরিবার স্বামী স্ত্রীর বাড়িতে এসে বসবাস করে। তাদের সন্তানেরা স্ত্রীর বংশ পরিচয়ে পরিচিতি লাভ করে। এ ধরনের পরিবারে মায়ের দিক থেকে বংশ গণনা করা হয় এবং পরিবারে মহিলাদের প্রাধান্য দেখা যায়। পরিবারের সমস্ত কাজে পুরুষ শুধু সহযোগিতা করে থাকে মাত্র। এছাড়া এ ধরনের পরিবারে মেয়েরাই শুধুমাত্র সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়। আমাদের দেশে গারোদের মধ্যে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার দেখা যায়। তাই বলা যায়, মা নেতৃত্বদানকারী এবং মায়ের দিক থেকে সন্তানের বংশ পরিচয় এটা মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের কাঠামো। অপরদিকে, প্রদীপ তার বাবার বংশ পরিচয়ে পরিচিত এবং পরিবারের সকল সিদ্ধান্ত বাবা দিয়ে থাকেন। সুতরাং এটি পিতৃতান্ত্রিক পরিবারকে নির্দেশ করে। যে পরিবারে পিতা পরিবারের প্রধান হিসেবে বিবেচিত হন তখন তাকে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার বলে। বিশ্বের অধিকাংশ সমাজে এ ধরনের পরিবার ব্যবস্থা প্রচলিত। পিতার অবর্তমানে পুত্রই পরিবার প্রধান হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি মূলত পুরুষশাসিত। পরিবার আদিকাল থেকেই পরিবারের নেতৃত্ব পুরুষের ওপর অর্পিত। এ ধরনের পরিবারে পুরুষই পরিবারের কর্তা হয়। পরিবারের সকল দায়িত্ব পুরুষের হাতে ন্যস্ত থাকে। পরিবারের ভরণপোষণ ও নিরাপত্তার জন্য পুরুষই দায়ী থাকে।
৫. সুমনা চায়ের দোকানদার। তার পরিবারে স্বামী সন্তান ছাড়া রয়েছে শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ, দেবর। সন্তানদের লেখাপড়া চালাতে তাকে বেগ পেতে হচ্ছে। সুমনার বান্ধবী সোমা সরকারি চাকরি পেয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়ে একমাত্র কন্যা ও স্বামীকে নিয়ে বসবাস করছে।
ক. পরিবার কী?
খ. ‘পরিবার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান’—কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. সুমনা কোন ধরনের পরিবারের সদস্য তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সুমনা ও সোমার পরিবারের কাঠামোগত পার্থক্য বিশ্লেষণ কর। কার পরিবার তোমার কাছে বেশি পছন্দনীয়, মতামত দাও।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এক বা একাধিক পুরুষ ও মহিলা তাদের সন্তানাদি, পিতামাতা ও অন্যান্য পরিজন নিয়ে যে সংগঠন গড়ে তোলে তাকে পরিবার বলে।
খ. মানুষ সামাজিক জীব। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পুরো সময়টাই পরিবারের সদস্য হিসেবে অতিবাহিত করতে হয়। আর এরকম এক একটি পরিবারকে নিয়ে গঠিত হয় সমাজ। এ পরিবারই সমাজের আদি সংগঠন। এখান থেকেই সমাজের ভিত্তি রচিত হয়েছে। তাই বলা যায়, পরিবার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
গ. সুমনা যৌথ পরিবারের সদস্য।
পরিবারের কাঠামো অনুযায়ী পরিবারকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন— পিতৃপ্রধান পরিবার, মাতৃপ্রধান পরিবার, একক পরিবার, যৌথ পরিবার, পিতৃবাস পরিবার, মাতৃবাস পরিবার প্রভৃতি। এ কাঠামোভিত্তিক পরিবারগুলোর মধ্যে একেকটির কাজের পরিধি একেক রকম। এ কাজের পরিধি বিবেচনায় সুমনার পরিবার যৌথ পরিবার। কারণ সুমনার পরিবারে তার স্বামী-সন্তান ছাড়াও শ্বশুর- শাশুড়ি ও ননদ-দেবর রয়েছে। আর সুমনা এ পরিবারের কর্তার দায়িত্ব পালন করছেন যা কেবল একটি যৌথ পরিবারেই দেখা যায়। সুতরাং বলা যায়, সুমনার পরিবারটি একটি যৌথ পরিবার।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সুমনা ও সোমার পরিবারের কাঠামোগত পার্থক্য বিশ্লেষণ করে পছন্দনীয় পরিবার সম্পর্কে আমার মতামত তুলে ধরা হলো—
সুমনা তার পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী ব্যক্তি। তার স্বামী সন্তানসন্ততি ছাড়াও শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ-দেবর রয়েছে। কাঠামোগত দিক থেকে সুমনার পরিবারকে যৌথ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
অন্যদিকে, সোমা তার একমাত্র কন্যা ও স্বামীকে নিয়ে শহরে বসবাস করছে। কাঠামোগত দিক থেকে এটি একক পরিবার বা অণু পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। আবার সোমার এ পরিবারকে নয়াবাস পরিবারও বলা যায়। কারণ সোমা তার নিজের বাবার বাড়ি বা শ্বশুরবাড়িতে বসবাস না করে একটি নতুন বাড়িতে বাস করছে। এ ধরনের পরিবারকে নয়াবাস পরিবারও বলে। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় একক পরিবারের আধিক্য লক্ষণীয়। কারণ একক পরিবারের সদস্যসংখ্যা কম থাকায় পরিবার পরিচালনা সহজ হয়। এছাড়া এখানে ক্ষুদ্র পরিসরে পারিবারিক উৎকর্ষ সাধন সহজ হয়। অন্যদিকে, যৌথ পরিবারে সদস্যসংখ্যা বেশি থাকে। যার ফলে পরিবার পরিচালনাকারীর ওপর বেশি চাপ পড়ে। তবে যৌথ পরিবারে পারস্পরিক বন্ধন খুবই দৃঢ় থাকে। একে অন্যের বিপদে খুব দ্রুত এগিয়ে আসে। যা একক পরিবারে লক্ষ করা যায় না। এজন্য সুমনাৱ পরিবারের কাঠামো অর্থাৎ যৌথ পরিবারই আমার পছন্দ।
0 মন্তব্যসমূহ