সৃজনশীল প্রশ্ন ১: সুদীপ্ত ও তনয়ার একমাত্র সন্তান মৌনতা। নিটোল চোখের শান্ত মৌনতা কথা বলতে পারে না। তার প্রতি মাঝে মাঝে মায়ের বিরূপ আচরণ মনে খুব দুঃখ দেয়, কিন্তু বাবার আদর ও ভালােবাসায় সে সব দুঃখ ভুলে যায়। সুদীপ্ত কখনােই মেয়েকে বােঝা মনে করেন না বরং তার কাছে মৌনতা সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ উদাহরণস্বরূপ। তাই, মৌনতার সব না বলা ভাষার চাহনি তার কাছে এক গল্পগাথা।
ক. ‘সুভা’ গল্পে কাকে অকর্মণ্য বলা হয়েছে?
খ. “বাক্যহীন মনুষ্যের মধ্যে বৃহৎ প্রকৃতির মতাে একটা বিজন মহত্ত্ব আছে।”- সুভা’ গল্পের লেখকের এই উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সুদীপ্ত চরিত্রটি ‘সুভা’ গল্পের কোন চরিত্রকে প্রতিফলিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের মৌনতার বাবা সুভা’ গল্পের সুভার বাবারই প্রতিচ্ছবি ।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক। ‘সুভা’ গল্পে প্রতাপকে অকর্মণ্য বলা হয়েছে।
খ। “বাক্যহীন মনুষ্যের মধ্যে বৃহৎ প্রকৃতির মতাে একটা বিজন মহত্ত্ব আছে।”- সুভা’ গল্পের লেখকের এই উক্তিটি তাৎপর্যপূর্ণ।
‘সুভা’ গল্পে সুভা বাকপ্রতিবন্ধী। জন্ম থেকেই সে কথা বলতে পারে না। ফলে সুভার বয়সী ছেলে-মেয়েরা তার সঙ্গে মেশে না। তাই ; সে নিজেকে পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। সে প্রকৃতির কাছে নিজেকে মেলে ধরে। নদীর কলধ্বনি, পাখির ডাক, মাঝির গান, লােকের কোলাহল ইত্যাদি দিয়ে প্রকৃতি সুভার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়।
সুভা যখন নদীর পাড়ে এসে বসে তখন প্রকৃতির নানা উপাদান নিজের সমস্ত ভাষা দিয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতাে সুভার হৃদয়ে আছড়ে পড়ে। নির্জন দ্বিপ্রহরের মতাে শব্দহীন সুভার চোখের ভাষা ছিল অসীম, উদার ও অতলস্পর্শ- অনেকটা গভীর স্বচ্ছ আকাশের মতাে, উদয়াস্ত এবং ছায়ালােকের নিস্তব্ধ রঙ্গভূমি। সেই চোখের ভাষা তার বয়সী ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারত না। এই কারণেই লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
সারকথা : সুভা গভীর উজ্জ্বল দৃষ্টি মেলে তার ভাব প্রকাশ করত। তাতে প্রকৃতির মতাে একটি বিজন মহত্ত্ব প্রকাশ পেত। প্রকৃতিই তার ভাষার অভাব পূরণ করে দিত।
গ। উদ্দীপকের সুদীপ্ত চরিত্রটি সুভা’ গল্পের সুভার বাবা বাণীকণ্ঠ চরিত্রকে প্রতিফলিত করে। সে রিলিজ বাবা-মায়ের কাছে সব সন্তানই সমান। তা সত্ত্বেও শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে অনেকেই পরিবার ও সমাজে অবহেলার শিকার হয়। তারা অন্য সবার মতােই সুবিধা লাভের অধিকার রাখে। তাই সবার উচিত প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করা।
উদ্দীপকে একজন বাকপ্রতিবন্ধী বালিকার প্রতি তার বাবা-মায়ের আচরণের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এখানে সুদীপ্ত ও তনয়ার একমাত্র সন্তান মৌনতা কথা বলতে পারে না। কথা বলতে না পারার যে কষ্ট তা সে বাবার স্নেহ-ভালােবাসায় ভুলে যায়। বাবা সুদীপ্ত মৌনতাকে কখনাে বােঝা মনে করেন না। মৌনতাকে তিনি স্রষ্টার উপহার মনে করেন। উদ্দীপকে মেয়ের বাবা সুদীপ্তর এই আচরণ ‘সুভা’ গল্পে সুভার প্রতি তার বাবা বাণীকণ্ঠর আচরণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই গল্পে, বাণীকণ্ঠও সুভাকে অন্য মেয়েদের অপেক্ষা বেশি ভালােবাসেন।
সুভার মা সুভাকে তার গর্ভের কলঙ্ক মনে করলেও বাণীকণ্ঠ সুভাকে স্নেহ ও যত্ন করতেন। উদ্দীপকেও মৌনতাকে তার মা তনয়া সহ্য করতে না পারলেও বাবা তাকে অতি স্নেহে বড় করে তুলেছে। এভাবে উদ্দীপকের সুদীপ্ত চরিত্রটির প্রতিফলন লক্ষ করা যায় ‘সুভা’ গল্পের বাণীকণ্ঠ চরিত্রের মধ্যে।
সারকথা : বাম্প্রতিবন্ধী মেয়ের প্রতি গভীর স্নেহ-মমতার দিক থেকে উদ্দীপকের সুদীপ্ত এবং সুভা’ গল্পের বাণীকণ্ঠ পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্র।
ঘ। “উদ্দীপকের মৌনতার বাবা সুভা’ গল্পের সুভার বাবারই প্রতিচ্ছবি।”_ মন্তব্যটি যথার্থ।
এক সময় ও প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্নরা আমাদের মতােই মানুষ। তাদেরও সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার আছে। অথচ আমাদের সমাজে তারা সেই সুযােগ পায় না। পরিবার ও সমাজে তাদের প্রতি বিরূপ আচরণ করতে দেখা যায়।
‘সুভা’ গল্পে সুভা বাক্প্রতিবন্ধী; সে কথা বলতে পারে না। এ কারণে শৈশব থেকেই সে অবহেলার শিকার । সমবয়সীরা তাকে খেলায় নেয় না, তার সঙ্গে খেলে না। মা তাকে গর্ভের কলঙ্ক মনে করেন। সেই অবস্থায় সুভার প্রধান দুই আশ্রয় তার বাবা বাণীকণ্ঠ এবং নির্বাক প্রকৃতি। সুভা তার বাবার স্নেহ-মমতায় প্রতিবন্ধিতার দুঃখ ভুলে থাকে আর প্রকৃতির কাছে মুক্তির আনন্দ খুঁজে পায়।
উদ্দীপকের মৌনতার বাবা সুদীপ্তও তার বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েকে অনেক স্নেহ-মমতায় আগলে রাখেন। মেয়েকে বােঝা মনে না করে স্রষ্টার আশীর্বাদ মনে করেন। মৌনতার চোখের দিকে তাকিয়ে তিনি তার মনের ভাষা বুঝতে পারেন। মায়ের বিরূপ আচরণের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট মৌনতা বাবার আদরে ভুলে যায়।
উদ্দীপকের বাক্প্রতিবন্ধী মেয়ে মৌনতার প্রতি বাবা সুদীপ্তের আচরণ এবং ‘সুভা’ গল্পে সুভার প্রতি তার বাবার আচরণ একসূত্রে গাথা। উভয় ক্ষেত্রেই বাকশক্তিহীন মেয়েরা বাবার স্নেহাশ্রয় লাভ করেছে এবং মায়ের অবহেলার শিকার হয়েছে। এসব দিক বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।
সারকথা : সুভা’ গল্পে সুভার বাবা বাণীকণ্ঠ বাক্প্রতিবন্ধী মেয়ে সুভাকে অন্য মেয়েদের তুলনায় বেশি ভালােবাসেন। উদ্দীপকের মৌনতার | বাবা সুদীপ্তও তার মেয়েকে অনেক স্নেহ করেন। তারা উভয়েই অভিন্ন স্নেহ-মমতার অধিকারী বাবা। এই দিক থেকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সৃজনশীল ০২: মেঘনার তীরবর্তী গ্রামে বেড়ে ওঠা দুরন্ত কিশোর জুনায়েদ দশম শ্রেণির ছাত্র। ক্লাসে সবচেয়ে প্রাণবন্ত ও অসম সাহসী এ কিশোর। সবকিছুতে তার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। খেলাধুলা, বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমি কোনো কিছুতে সে পিছিয়ে নেই। হঠাৎ একদিন সড়ক দুর্ঘটনায় সে তার একটি পা হারায়। এতে সে মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। পড়ালেখায় মন দিতে পারছে না। তার সর্বদা মনে হতে লাগল * এখন আর পড়ালেখা করে কী লাভ হবে? কিন্তু তার সহপাঠীরা তাকে উৎসাহ ও সাহস দিয়ে আবার প্রাণচঞ্চল করে তোলে। সে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়। সকলে তার সফলতায় খুশি হয়।
ক. সুভা কার কাছে মুক্তির আনন্দ পায়?
খ. মা সুভাষিণীকে নিজের ত্রুটিম্বরূপ দেখতেন কেন?
গ. উদ্দীপকের জুনায়েদের মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার দিকটি ‘সুভা’ গল্পের সুভার সঙ্গে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সহপাঠীদের মতো মানসিকতা থাকলে ‘সুভা’ গল্পের সুভার পরিবারকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো-না— মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক। সুভা বিপুল নির্বাক প্রকৃতির কাছে মুক্তির আনন্দ পায়।
খ। একজন মা ছেলে অপেক্ষা মেয়েকে নিজের অংশরূপে দেখেন বলে মা সুভাষিণীকে নিজের ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন। ‘সুভা’ গল্পে সুভা বাপ্রতিবন্ধী। জন্ম থেকেই সে কথা বলতে পারে না। এ জন্য তার মা তাকে নিজের একটি ত্রুটিম্বরূপ দেখতেন। কারণ সমাজে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী একজন মা ছেলে অপেক্ষা তার মেয়েকে নিজের অংশরূপে দেখেন। এ জন্য মেয়ের কোনো অসম্পূর্ণতা দেখলে মা সেটিকে নিজের লজ্জার কারণ বলে মনে করেন।
গ। উদ্দীপকের জুনায়েদের মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার দিকটি ‘সুভা’ গল্পের সুভার নিজেকে গোপন করার চেষ্টার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের সমাজ অবহেলার চোখে দেখে। এই কারণে তারা পরিজনদের মাঝে থেকেও অসহায়ের মতো জীবনযাপন করে। আমাদের উচিত তাদের দিকে সহমর্মিতা ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
উদ্দীপকে দুরন্ত কিশোর জুনায়েদ সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। লেখাপড়ায় মন দিতে পারে না। ফলে সে হতাশায় নিমজ্জিত হয়। তার এই ভেঙে পড়ার সঙ্গে ‘সুভা’ গল্পের সুভার মনের অবস্থার সাদৃশ্য রয়েছে। সুভা বাপ্রতিবন্ধী। সে যে বিধাতার অভিশাপরূপে তার বাবার ঘরে এসে জন্মগ্রহণ করেছিল তা শিশুকাল থেকেই বুঝেছিল। এ জন্য সে নিজেকে সাধারণের দৃষ্টিপথ থেকে সবসময় গোপন করে রাখার চেষ্টা করত। এভাবে সুভার এই মানসিকতার সঙ্গে উদ্দীপকের জুনায়েদের মানসিকতা সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ। উদ্দীপকের সহপাঠীদের মতো মানসিকতা থাকলে ‘সুভা’ গল্পের সুভার পরিবারকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো না— মন্তব্যটি যথার্থ।
শারীরিক প্রতিবন্ধীরা আমাদের পরিবার ও সমাজেরই অংশ। অথচ তাদের প্রতি স্বাভাবিক আচরণ করি না। আমরা বৈষম্যপূর্ণ আচরণ করি। এতে করে তাদের জীবন হতাশা ও দুঃখময় হয়ে ওঠে। আমাদের উচিত তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।
উদ্দীপকের জুনায়েদ দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তার সহপাঠীরা তাকে উৎসাহ ও সাহস দিয়ে আবার প্রাণচঞ্চল করে তোলে। সে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তার কৃতিত্বে সবাই খুশি। ‘সুভা’ গল্পের সুভাও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক বালিকা। সে জন্ম থেকেই কথা বলতে পারে না। ফলে তাকে তার পরিবারের লোকজনের মনঃকষ্টের কারণ হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। নিজেকে সে অসহায় ভাবে। কারণ উদ্দীপকের সহপাঠীদের মতো তাকে কেউ সাহস-সহানুভূতি জোগায়নি।
সৃজনশীল ০৩: জাবিদ, জহির ও খালিদ তিন বন্ধু একই স্কুলে একই শ্রেণিতে পড়ে এবং একসাথে স্কুলে যায়। জাবিদের মাঝেমধ্যে হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে কষ্ট হয়। পা অবশ হয়ে আসে। পথ চলতে গিয়ে কখনো কখনো বসে পড়ে সে। জহির ও খালিদ তাকে সঙ্গ দেয়। এতে তাদের মাঝেমধ্যে স্কুলে পৌছাতে দেরি হয়ে যায়। জাবিদের মায়ের কাছ থেকে জানা যায়, ছোটবেলায় তার ভীষণ অসুখ হওয়ার পর থেকে তার এ সমস্যাটি দেখা দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে জামিল স্যার জাবিদকে সহযোগিতার জন্য খালিদ ও জহিরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
ক. ‘কিশলয়’ অর্থ কী?
খ. ‘তুমি আমাকে যাইতে দিয়ো না, মা’- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের জাবিদ আর ‘সুভা’ গল্পের সুভার মিল কোথায়? বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকের জামিল স্যার ও জাবিদের বন্ধুদের ভূমিকা ‘সুভা’ গল্পের লেখকের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন— বিশ্লেষণ কর।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক। ‘কিশলয়’ অর্থ গাছের নতুন পাতা।
খ। নিজের চিরচেনা জগৎকে আঁকড়ে ধরে সুভা প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে। বাকপ্রতিবন্ধী শুভাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য তার পিতা তাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে চায়। কলকাতা যাওয়ার আগের দিন সুভা তার চিরপরিচিত জগৎ নদীতীরে এসে লুটিয়ে পড়ে। দুই বাহু প্রসারিত করে সে যেন ধরণিকে আঁকড়ে ধরতে চায়। কারণ সে তার এই চিরচেনা প্রকৃতি ও পরিবেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চায় না। সে চায় ধরণিও তাকে যেন জড়িয়ে ধরে রাখে। তাকে যেন যেতে না দেয়। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে সুভার এই মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে।
গ। শারীরিক প্রতিবন্ধিতার দিক দিয়ে উদ্দীপকের জাবিদ আর ‘সুভা’ গল্পের সুভার মিল রয়েছে। পৃথিবীতে সব মানুষই সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে জন্মায় না। বিভিন্ন কারণে কিছু মানুষ নানা রকম শারীরিক ত্রুটি নিয়েও জন্মে। আবার অনেকে নানান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে শরীরের অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হয়ে যায়। তাই এ ধরনের মানুষের প্রতি আমাদের সদয় দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
উদ্দীপকের জাবিদ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তার দুটি পা থাকলেও তাতে কোনো শক্তি নেই। হাঁটলে পা অবশ হয়ে আসে। চলতে চলতে বসে পড়তে হয়। ছোটবেলায় অসুখ হওয়ার পর থেকে তার এ সমস্যা দেখা দেয়। ‘সুভা’ গল্পের সুভাও জন্ম থেকে বোবা। তার সবকিছু দেখা ও বোঝার ক্ষমতা থাকলেও নিজের ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা নেই। তবে সে চোখ দিয়ে মনের ভাব অনেকটাই প্রকাশ করতে পারে। তাই বলা যায় যে, শারীরিক প্রতিবন্ধিতার দিক দিয়ে উদ্দীপকের জাবিদ আর ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ। উদ্দীপকের জামিল স্যার ও জাবিদের বন্ধুদের ভূমিকা ‘সুভা’ গল্পের লেখকের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন— মন্তব্যটি যথার্থ। শারীরিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন একটু সহানুভূতি ও ভালোবাসা।
মানুষের মমত্ববোধ ও ভালোবাসা তাদের কষ্ট দূর করতে পারে। তাদের জীবনকে সুন্দর করতে পারে। উদ্দীপকের জামিল স্যার ও জাবিদের বন্ধু জহির ও খালিদ মানবিক চেতনাসম্পন্ন মানুষ। জাবিদের শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে বিদ্যালয়ে যেতে কষ্ট হয়। কিন্তু জহির ও খালিদ তাকে সঙ্গ দেয়। বিষয়টি জামিল স্যার জানতে পেরে জাবিদের বন্ধুদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তাদের সহযোগিতার কারণে জাবিদ বিদ্যালয়ে যেতে পারে। ‘সুভা’ গল্পের লেখক মূলত এই গল্পের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী মানুষের আশ্রয়ের জন্য একটি জগৎ তৈরি করেছেন।
সেই সঙ্গে তাদের প্রতি আমাদের মমত্ববোধের উন্মেষ ঘটাতে চেয়েছেন। ‘সুভা’ গল্পের লেখক কিশোরী সুভার প্রতি হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও মমত্ববোধের প্রকাশ ঘাটিয়েছেন। তিনি মূলত বলতে চেয়েছেন প্রতিবন্ধীরাও মানুষ। সবার মতো তাদেরও ভালো কিছু করার এবং সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মতো বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। উদ্দীপকের জামিল স্যার ও জাবিদের বন্ধুরা জাবিদকে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে লেখকের সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ২০২৩
সৃজনশীল ০৪: মেয়েটির নাম আঁখি। চোখে না দেখলেও বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। বন্ধুদের অন্যতম ‘তিতু’ জন্মদিনের উপহার হিসেবে আঁখিকে একটি ঝুনঝুন বল উপহার দেয়। এই বলের সাহায্যে ক্রিকেট খেলার ছক্কা মেরে আঁখি তার দলকে বিজয় এনে দেয়।
ক. সুভা দুই বাহুতে কাকে ধরে রাখতে চায়?
খ. সুভা পিতামাতার মনে সর্বদাই জাগরূক ছিল কেন? বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকে ‘সুভা’ গল্পের যে বিশেষ দিকের প্রতিফলন ঘটেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “সুভা’ গল্পের ‘প্রতাপ’ যদি উদ্দীপকের ‘তিতু’ হতো, তাহলে ‘সুভা’ গল্পের পরিণতি অন্য রকম হতে পারত।”- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সুভা দুই বাহুতে প্রকাণ্ড মূক মানবতাকে ধরে রাখতে চায়।
খ. জন্ম থেকে কথা বলতে না পারার কারণে সুভা পিতা-মাতার মনে সর্বদাই জাগরূক ছিল। ‘সুভা’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভা। সে জন্মগতভাবেই বোবা। সে বিধাতার অভিশাপরূপে জন্মেছে বলে নিজেকে আড়াল করে রাখত এবং কষ্ট পেত। তার মা তাকে নিজের গর্ভের কলঙ্ক বলে মনে করত। সুভার কথা বলতে না পারার বেদনা তার বাবা-মা কখনই ভুলতে পারত না। তাই সুভা সর্বদাই পিতা-মাতার মনে জাগরূক ছিল।
গ. উদ্দীপকে ‘সুভা’ গল্পের সুভার শারীরিক প্রতিবন্ধিতার প্রতিফলন ঘটেছে। শারীরিক সীমাবদ্ধতা বা প্রতিবন্ধিতা ব্যক্তির ইচ্ছ-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ না করলে তাদেরকে মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করা সহজ নয়। ‘সুভা’ গল্পের সুভা জন্মগতভাবেই বোবা। কথা বলতে পারে না বলে সে নিজেকে স্রষ্টার অভিশাপ মানে করত। এজন্য সে নিজেকে সব সময় আড়াল করে রাখত। তবুও কথা বলতে না পারার কষ্ট সে কখনো ভুলতে পারত না। কারণ তার মাও তাকে গর্ভের কলঙ্ক মনে করত।
অন্যদিকে উদ্দীপকের আঁখিও চোখে দেখতে পায় না। তাই বলে সে থেমে থাকেনি। সে যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে তার পড়াশোনা চালিয়ে যায়। বন্ধুর দেওয়া একটি ঝুনঝুন বল দিয়ে সে খেলতে শেখে, এক সময় সে ক্রিকেট খেলায় ছক্কা মেরে দলকে জয় এনে দেয়।
ঘ. ‘সুভা’ গল্পের প্রতাপ যদি উদ্দীপকের তিতু হতো, তাহলে ‘সুভা’ গল্পের পরিণতি অন্য রকম হতে পারত— মন্তব্যটি যথার্থ। আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধি বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের প্রতি সাধারণত স্বাভাবিক আচরণ করা হয় না। তাদেরকে অবহেলা করা হয়। শারীরিক সীমাবদ্ধতা সব সময় সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। যথার্থ সহায়তা ও আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ পেলে তারাও সফল মানুষ হতে পারে।
উদ্দীপকের আঁখি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও বন্ধু তিতুর সহায়তায় সে সফল হয়েছে। সে যন্ত্রের সাহায্যে তার পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। তিতুর দেওয়া একটি ঝুনঝুন বল দিয়ে ক্রিকেট অনুশীলন করে সে ছক্কা মেরে তার দলকে জিতিয়েছে। অন্যদিকে ‘সুভা’ গল্পের সুভা সেই সুযোগ পায়নি। তার পরিবার সমাজ কারও কাছ থেকেই সহানুভূতি পায়নি। এমনকি তার মা ও তাকে গর্ভের কলঙ্ক মনে করেছে। এই গ্রামের ভবঘুরে ছেলে প্রতাপই শুধু তার সাথে মিশেছে। উদ্দীপকের তিতুর মতো প্রতাপ সুভাকে সাহায্য করেনি।
তাই বলা যায় প্রতাপ যদি উদ্দীপকের তিতুর মতো হতো তা হলে গল্পের পরিণতি ভিন্ন হতো। ‘সুভা’ গল্পে প্রতিবন্ধিতার কারণে সুভাকে কেউ সহজভাবে গ্রহণ করেনি। প্রতাপ তাকে ‘সু’ বলে ডাকত কেবল ছিপ ফেলে মাচ ধরার সময় একজন নির্বাক সঙ্গী প্রয়োজন মনে করে। অন্যদিকে উদ্দীপকের আঁখিকে তার বন্ধু তিতু সহায়তা করেছে। সে সুযোগ পেয়ে তার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সৃজনশীল ০৫: বাবা-মা হারা রেজা তার চাচা আমজাদ সাহেবের কাছে থাকে। রেজার একটি হাত ও একটি পা নেই। তবু সে থেমে থাকে না। ক্লাসে ভালো ফলাফল করায় শিক্ষকগণ তাকে স্নেহ করেন। সহপাঠীরা তাকে সহযোগিতা করে। তবে কেউ কেউ তাকে নিয়ে তামাশা করে। ফলে অনেক সময় মন খারাপ হয়। চাচা তাকে বলে, “মন খারাপ করো না, এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে তুমি সবাইকে দেখিয়ে দাও যে তুমিও পার।”
ক. সুভার মা সুভার প্রতি বিরক্ত ছিলেন কেন?
খ. সুভা মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের রেজার সাথে ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সুভার বাবা-মায়ের মানসিকতা যদি রেজার চাচার মতো হতো তবে সুভার পরিণতি অন্য রকম হতে পারত- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. জন্ম থেকে সুভা কথা বলতে পারত না বলে সুভার মা তাকে নিজের গর্ভের কলঙ্ক জ্ঞান করে তার প্রতি বিরক্ত ছিলেন।
খ. সুভা মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত তার নিজের প্রয়োজনীয়তা প্রতাপকে বোঝানোর জন্য । প্রতাপ যখন ছিপ ফেলে জলের দিকে চেয়ে থাকত তখন সুভা তার কাজে সাহায্য করতে চাইত। সে কাজের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাইত যে এই পৃথিবীতে সেও একজন প্রয়োজনীয় লোক। অথচ সুভা সেসব কিছুই করতে পারত না। আর এই কারণেই সে বিধাতার কাছে প্রার্থনা করত— যাতে অলৌকিক ক্ষমতাবলে কোনো একটি কাজ করে সে প্রতাপের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
গ. উদ্দীপকের রেজার সাথে ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাদৃশ্য হলো শারীরিক প্রতিবন্ধিতার। আমাদের সমাজে শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে মানুষ নানাভাবে অবহেলা ও অবজ্ঞার শিকার হয়। অথচ তারাও আমাদের মতো মানুষ। আমাদের একটু সহানুভূতিই তাদের জীবন আরও সুন্দর হতে পারে
উদ্দীপকের রেজা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার। তার একটি হাত ও একটি পা নেই। এ কারণে অনেকে তাকে নিয়ে তামাশা করে। ফলে তার মন খারাপ হয়। ‘সুভা’ গল্পের সুভাও জন্মগতভাবে বোবা। সে কথা বলতে পারে না। বাপ্রতিবন্ধী সুভা পরিবার ও স্বজনদের অবহেলা ও অবজ্ঞার মধ্য দিয়েই বড় হয়েছে। তার নিজের মাও তার ওপর বিরক্ত হয়েছেন, তাকে তার গর্ভের কলঙ্ক মনে ‘করেছেন। উদ্দীপকের রেজা ও ‘সুভা’ গল্পের সুভা উভয়েই শারীরিক প্রতিবন্ধী। এভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধিতার দিক থেকে উদ্দীপকের রেজার সঙ্গে ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. সুভার বাবা-মায়ের মানসিকতা যদি রেজার চাচার মতো হতো তবে সুভার পরিণতি অন্য রকম হতে পারত— উক্তিটি যথার্থ । সমাজে যেকোনো মানুষ শারীরিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। তাই বলে তাদের অবজ্ঞা করা উচিত নয়। তারা এই সমাজেরই অংশ। সুযোগ পেলে তারাও সাধারণের মতো অসাধ্য সাধন করতে পারে।
উদ্দীপকের রেজা বাবা-মা হারা। সে চাচার আশ্রয়ে থাকে। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার। রেজার একটি হাত ও একটি পা নেই । তার এই দুরবস্থা দেখে অনেকেই তামাশা করে। তার চাচা তাকে সাহস দেয়, অনুপ্রাণিত করেন। তিনি রেজাকে পড়ালেখা শেখান এবং তাকে এসএসসিতে ভালো ফল করে সবাইকে দেখিয়ে দিতে বলেন। প্রমাণ করতে বলেন যে সেও সবার মতোই একজন মানুষ। অন্যদিকে ‘সুভা’ গল্পের সুভাও শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার। কেবল বাবা ছাড়া বাকি সবার কাছ থেকে সে শুধু অবহেলা পেয়েছে। এমনকি তার নিজের মাও তাকে গর্ভের কলঙ্ক মনে করেন। লোকনিন্দার ভয়ে তার বাবা তাকে বিয়ে দিতে শহরে নিয়ে যান।
উদ্দীপকের রেজা এবং ‘সুভা’ গল্পের সুভা উভয়েই প্রতিবন্ধিতার শিকার। রেজাকে তার চাচা পড়াশোনা করান। শক্তি ও সাহস জোগান জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে, যা আলোচ্য গল্পের সুভা তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে পায় না। যদি তার বাবা-মায়ের মানসিকতা রেজার চাচার মতো হতো তাহলে সুভাকে তার গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় যেতে হতো না। তার পরিণতি আরও সুন্দর হতে পারত। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।
সৃজনশীল ০৬: পারমিতা জন্মান্ধ। খেলার সাথি না জুটলেও সে নিঃসঙ্গ নয়। বিকেল বেলায় সে বাড়ির দিঘির শান বাঁধানো ঘাটে গিয়ে বসে। স্নিগ্ধ শীতল জলের সঙ্গে তার দরদ ভরা আলাপ চলে। এ সবের মাঝে সে মুক্তির আনন্দ খুঁজে পায়। পরবর্তীতে পারমিতাকে পাত্রস্থ করার জন্য তার পিতা-মাতাকে বেশি ভাবতে হয়নি। প্রতিবেশী আলম সাহেব পারমিতাকে তার পুত্রবধূ হিসেবে বরণ করে নেয়।
ক. প্রতাপের প্রধান শখ কী?
খ. সুভার সমস্ত হৃদয় অবাষ্পে ভরে গেল কেন? বুঝিয়ে গেল।
গ. উদ্দীপকের পারমিতার মুক্তির আনন্দের সাথে সুভার চরিত্রের যে দিকের মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর?
ঘ. “উদ্দীপকের পারমিতার জীবনের পরিণতির বিপরীত চিত্র সুভার জীবনে মর্মবেদনার কারণ।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
৬নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রতাপের প্রধান শখ ছিপ ফেলে মাছ ধরা।
খ. কলকাতায় যাওয়ার আয়োজন শুরু হওয়ায় সুভার সমস্ত হৃদয় অশ্রুবাষ্পে ভরে গেল। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা মেয়ের কথা চিন্তা করে বিদেশ যান। ফিরে এসে স্ত্রীকে সপরিবারে কলকাতায় যাওয়ার কথা বলেন। কথা বলতে না পারলেও সুভা বুঝতে পারে তার পিতা পরিচিত পরিবেশ থেকে তাকে কলকাতায় নিয়ে যাচ্ছে। একটা অনির্দিষ্ট আশঙ্কায় সে সবসময় বাবা-মায়ের সাথে সাথে থাকতে শুরু করে। নিজের চিরচেনা পরিবেশ ও বন্ধুদের ছেড়ে নতুন জায়গায় যেতে হবে ভেবে কুয়াশা ঢাকা প্রভাতের মতো সুভার সমস্ত হৃদয় অশ্রুবাষ্পে ভরে যায় ।
গ. উদ্দীপকের পারমিতার মুক্তির আনন্দের সাথে ‘সুভা’ গল্পের সুভার চরিত্রের যে দিকের মিল রয়েছে তা হলো নির্বাক প্রকৃতির মাঝে মুক্তির আনন্দ ও আশ্রয়লাভ।
প্রকৃতি মানে আমাদের চারপাশের পরিবেশ ও তার উপাদানসমূহ। মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির একটা হৃদ্যতার সম্পর্ক রয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে প্রকৃতি তার প্রতি সম্পর্কের হাত হাত বাড়িয়ে দেয়। উদ্দীপকের পারমিতা জন্মান্ধ। বিকেল বেলায় সে বাড়ির দিঘির শান বাঁধানো ঘাটে গিয়ে বসে। স্নিগ্ধ শীতল জলের সঙ্গে তার দরদ ভরা আলাপ চলে। এসবের মাঝে সে মুক্তির আনন্দ খুঁজে পায়।
উদ্দীপকের পারমিতার মতো ‘সুভা’ গল্পের সুভার মধ্যেও প্রকৃতির প্রতি অনুরক্ততা পাওয়া যায়। সুভার বাকশক্তি নেই। তাই মানুষের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক হয়নি। তার কথা বলার এই শূন্যতা পূরণ করেছে প্রকৃতি। সুভা তার অনুভূতি দিয়ে প্রকৃতিকে জয় করে নিয়েছে। প্রকৃতির মাঝে সে প্রাণের স্পর্শ খুঁজে নিয়েছে। প্রকৃতিই হয়ে উঠেছে তার আশ্রয়। বিপুল নির্বাক প্রকৃতির কাছে সে মুক্তির আনন্দ লাভ করেছে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের পারমিতার মুক্তির আনন্দের সঙ্গে সুভার চরিত্রের মিলের দিকটি হলো নির্বাক প্রকৃতির মাঝে মুক্তির আনন্দ ও আশ্রয়লাভ।
ঘ. “উদ্দীপকের পারমিতার জীবনের পরিণতির বিপরীত চিত্র সুভার জীবনে মর্মবেদনার কারণ।”- মন্তব্যটি যথার্থ। শারীরিক প্রতিবন্ধীরা আমাদের পরিবারও সমাজেরই অংশ। আমরা অনেক সময় তাদের সঙ্গে বৈষম্যপূর্ণ আচরণ করি। এতে তাদের স্বাভবিক জীবন বিঘ্নিত হয়। তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল আচরণ করা উচিত।
উদ্দীপকের পারমিতা ও ‘সুভা’ গল্পের সুভার মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নারী। তবে তাদের পরিণতি এক নয়। আলম সাহেবের উদার মানসিকতার কারণে পারমিতা সুন্দর একটি জগৎ ও সবার কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়েছে। অন্যদিকে সুভা তার মা ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে যে আচরণ পেয়েছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। বিয়ের বয়স হলেও বিয়ে হয়নি বলে তার পিতাকে লোকে নিন্দা করেছে। শেষ পর্যন্ত সুভাকে তার আপন পরিবেশ ছেড়ে কলকাতায় যেতে হয়েছে যা তার মর্মবেদনার কারণ।
উদ্দীপকের পারমিতার ‘সুভা’ গল্পের সুভার সঙ্গে শারীরিক অবস্থাগত মিল থাকলেও সুড়ার পরিণতি পারমিতার জীবনের পরিণতির বিপরীত। কারণ পারমিতাকে প্রতিবেশী আলম সাহেব পুত্রবধূ হিসেবে বরণ করে নিয়েছে। যা সুডার মর্মবেদনার মূল কারণ। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সৃজনশীল ০৭: রিয়ার বয়স সতেরো পেরিয়ে আঠারোয় পড়েছে। ওর সমবয়সী অনেকেই বিয়ে-থা করে রীতিমতো সংসারী। কিন্তু রিয়ার জন্ম থেকেই হাত দুটো অসাড় হওয়ায় অন্যদের মতো তার সংসার করা হয়নি। রিয়ার বিধবা মা সেলিনা বেগম এতে বিচলিত নন। ছোট ছেলে পনেরো বছরের রাতুলের চেয়ে কোনো অংশে রিয়ার আদর-যত্ন তিনি কম করেন না। পাড়ার দু’একজন অবশ্য রিয়ার বিকাশের পথে জিন-ভূতের আছরকে দায়ী করে। কিন্তু ওসবকে পাত্তা দেন না সেলিনা বেগম।
ক. সুভা জলকুমারী হলে কী করত?
খ. প্রতাপকে নিতান্ত অকর্মণ্য লোক কেন বলা হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সেলিনা বেগম এবং ‘সুভা’ গল্পের সুভার মায়ের বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের রিয়া কি ‘সুভা’ গল্পের সুভা? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দেখাও।
৭নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সুভা জলকুমারী হলে আস্তে আস্তে জল থেকে উঠে সাপের মাথায় মণি ঘাটে রেখে যেত।
খ. জীবনের প্রতি উদাসীন আচরণের কারণে প্রতাপকে অকর্মণ্য লোক বলা হয়েছে। প্রতাপকে তার বাবা-মা সংসারের দায়দায়িত্ব দিয়ে দায়িত্বশীল করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো ভালো ফলাফল পাওয়া যায়নি। বরং প্রতাপ চলেছে তার নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী। সে ছিপ ফেলে মাছ ধরে। গ্রামের অন্যদের কাজকর্ম করে দিতে তার আগ্রহ ও আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। সে অন্যের প্রয়োজন মেটাতে অত্যন্ত উদার ও সচেতন। সেই দিক থেকে সে গ্রামের সবার উপযোগী সরকারি সম্পত্তির মতো। শুধু নিজ সংসার ও বাড়ির দায়িত্বের প্রতিই সে উদাসীন। এ কারণেই ‘সুভা’ গল্পে প্রতাপকে নিতান্ত অকর্মণ্য লোক বলা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের সেলিনা বেগম এবং ‘সুভা’ গল্পের সুভার মায়ের মধ্যে সন্তানের প্রতি আচরণগত বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষেরা আমাদের অবহেলার পাত্র নয়। তারাও আমাদের সমাজেরই অংশ। অথচ আমরা তাদের অবহেলা করি, এড়িয়ে চলি। তাদের সাথে এমন অমানবিক আচরণ না করে বরং তাদেরকে আপন করে কাছে টেনে নিলে তারাও আমাদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। উদ্দীপকে একজন প্রতিবন্ধী কন্যা সন্তানের প্রতি মায়ের গভীর ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়েছে।
এখানে মা সেলিনা বেগম প্রতিবন্ধী মেয়ে রিয়াকে সাদরে গ্রহণ করেছে। জন্ম থেকেই রিয়ার দু’হাত অসাড়। ফলে তার মা সেলিনা বেগম মেয়ের প্রতি যত্ন নিয়েছেন। তিনি রিয়ার অক্ষমতাকে নিজের ত্রুটি হিসেবে দেখে না, রিয়াকে তাচ্ছিল্য করেন না। তিনি ছেলেকে যেমন আদর-যত্ন করেন, রিয়াকেও তেমন আদর-যত্ন করেন। পাড়াপ্রতিবেশীরা রিয়ার ব্যাপারে কোনো কথা বললে তাতে তিনি বিশেষ বিচলিত হন না। ‘সুভা’ গল্পে সুভার মায়ের মাঝে এই বিষয়গুলো দেখা যায় না।
সুভা জন্ম থেকেই কথা বলতে অক্ষম। সুভার এই ত্রুটিকে তার মা নিজের অযোগ্যতা মনে করেন। সুভার কথা বলতে না পারা যেন তারই গর্ভের কলঙ্ক। তিনি ‘সুভার এই অসম্পূর্ণতাকে নিজের লজ্জার কারণ মনে করে সুভাকে সহ্য করতে পারেন না। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সেলিনা বেগম এবং ‘সুভা’ গল্পের সুভার মায়ের প্রতিবন্ধী সন্তানের প্রতি আচরণগত বৈসাদৃশ্য রয়েছে। .
ঘ. উদ্দীপকের রিয়া ‘সুভা’ গল্পের সুভা নয়।
সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বাস করে। তাদের মধ্যে কেউ শারীরিকভাবে সক্ষম, আবার কেউ অক্ষম। শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষ সবসময়ই অবহেলার পাত্র হয়। আমরা যদি তাদের প্রতি আন্তরিক হই এবং সহানুভূতি দেখাই, তাহলে তারা আমাদের মতোই সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে।’ উদ্দীপকে প্রতিফলিত রিয়া জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তার হাত দুটো অসাড়। ফলে তার মা তাকে সব সমস্যা থেকে আগলে রেখে পরম মমতায় বড় করেছেন। অন্যের সমালোচনা থেকে রিয়াকে আড়াল করেছেন।
‘সুভা’ গল্পে সুভা মুখে কথা বলতে পারত না, তবে তার মাঝে বোধশক্তি ছিল। তার বোধশক্তি দ্বারা সে অনেক কিছু বুঝে নিত। তবু সুভার মা সুভাকে নিজের কলঙ্ক ভাবতেন তিনি। সুভার ত্রুটিকে নিজের লজ্জা কলঙ্ক মনে করতেন। মা অপেক্ষা বাবা সুভাকে বেশি স্নেহ করত। প্রকৃতি ও পশুপাখির সাথে সুভার নিবিড় সম্পর্ক ছিল। গ্রাম ছেড়ে কলকাতা যাওয়ার সময় তার এই সত্তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সুভা নিজে নিজের অক্ষমতাকে ভুলে থাকার জন্য কল্পনাবিলাসী হয়ে উঠত। মনের অজান্তে, কল্পনার মধ্য দিয়ে সে অন্যের কাছে গুরুত্ব লাভ করত।
উদ্দীপকের রিয়া প্রতিবন্ধিতার দিক থেকে সুভার মতো হলেও সুডার আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল। সুভার প্রখর বোধশক্তি, প্রকৃতিপ্রেম ও সম্পর্ক, কল্পনাপ্রবণতা ছিল। এই দিক এবং মায়ের অনাদরের দিক থেকে রিয়া অপেক্ষা তার জীবন হয়েছে আলাদা। আর এ কারণেই বলা যায়, উদ্দীপকের রিয়া ‘সুভা’ গল্পের সুভা নয় ।
সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ২০২৩
সৃজনশীল ০৮: দুই পা আছে কিন্তু উঠে দাঁড়াবার শক্তি নেই। তাতে কী? আত্মবিশ্বাস তো আছে। তাই তো জীবনযুদ্ধে দমে যাননি আলমগীর হোসেন। ছোটবেলায় টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন তিনি। তারপর থেকে হাঁটা-চলা ও কাজকর্ম করার কথা কখনো চিন্তা করতে পারেননি আলমগীর । কিন্তু শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও জীবিকার তাগিদে রিকশাকে বেছে নিয়েছেন হাতিয়ার হিসেবে।
ক. সুভা জলকুমারী হলে কী করত?
খ. “তাহার মর্ম তাহারা ভাষার অপেক্ষা সহজে বুঝিত”— কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের আলমগীর হোসেনের সাথে ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের আলমগীর হোসেনের পরিস্থিতি ও পরিণতি সুভার পরিণতি থেকে ভিন্ন।”- মতামত দাও।
৮নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সুভা জলকুমারী হলে আস্তে আস্তে জল থেকে উঠে একটা সাপের মাথার মণি ঘাটে রেখে যেত।
খ. “তাহার মর্ম তাহারা ভাষার অপেক্ষা সহজে বুঝিত” কথাটি দ্বারা সুভার পশুপ্রেম বোঝানো হয়েছে। সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধুর দলের মাঝে দুটি গাভীও ছিল। তাদের নাম সর্বশী ও পাঙ্গুলি। সুভা কথা বলতে পারত না বলে কখনো তাদেরকে নাম ধরে ডাকতে পারেনি। সুভার কথা শুনতে না পেলেও তারা সুভার পায়ের আওয়াজ চিনতে পারত। তার কথাহীনতার মধ্যেই একটা করুণ সুর ছিল। আর এই করুণ সুরের মর্ম তারা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি সুভার পশুপ্রেমের প্রসঙ্গেই করা হয়েছে।
গ. শারীরিক প্রতিবন্ধিতার দিক দিয়ে উদ্দীপকের আলমগীর ও ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাদৃশ্য রয়েছে।
পৃথিবীতে সব মানুষই সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে জন্মায় না। কিছু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষও জন্মে। আবার অনেকে নানান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে শরীরের অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হয়ে যায়। তাই এ ধরনের মানুষের প্রতি আমাদের সদয় দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। উদ্দীপকের আলমগীর হোসেন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তার দুটো পা থাকলেও তাতে কোনো শক্তি নেই। ছোটবেলায় টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে সে পা দিয়ে হাঁটা বা উঠে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলে। ফলে সে চিরতরে পঙ্গু হয়ে।
‘সুভা’ গল্পের সুভাও জন্ম থেকে বোবা। তার স্বকিছু দেখা ও বোঝার ক্ষমতা থাকলেও নিজের ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা নেই। তবে সে চোখ দিয়ে মনের ভাব অনেকটাই প্রকাশ করতে পারে। তাই শারীরিক প্রতিবন্ধিতার দিক দিয়ে উদ্দীপকের আলমগীর হোসেন ও ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকের আলমগীর হোসেনের পরিস্থিতি ও পরিণতি সুভার পরিণতি থেকে ভিন্ন।”- মন্তব্যটি যথার্থ। মানুষের জীবনে যেকোনো পরিস্থিতিই আসুক না কেন, কোনো অবস্থায়ই হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য লক্ষ্য স্থির করতে হয় এবং সেই লক্ষ্যে পৌছার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। আর এর জন্য প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল।
উদ্দীপকের আলমগীর টাইফয়েডে আক্রান্ত হন ছোটবেলায়। এর ফলে তার পায়ের শক্তি হারিয়ে যায়। পায়ের সব শক্তি হারিয়ে ফেললেও তিনি মনে বল হারাননি। জীবিকা অর্জনের জন্য রিকশাকে বেছে নিয়েছেন। তিনি জীবনকে নিজের পঙ্গুত্বের কাছে হেরে যেতে দেননি। ‘সুভা’ গল্পে সুভা জন্ম থেকেই বোবা।
নিজের মনের ভাব সে মুখে প্রকাশ করতে পারে না। এ কারণে সুডার বাবা-মা তাকে নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে। বিশেষ করে মা তাকে নিজের কলঙ্ক বলে মনে করে। সুভা তা বুঝতে পেরে নিজেকে সবসময় লুকিয়ে রাখতে চায়। অসহায় সুভাকে যখন বাবা-মা শহরে নিয়ে যেতে চান, তখন তার অমত থাকলেও কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। মনে মনে শুধু কষ্ট পায়। সুভা তার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। কারণ তার চারপাশের পরিস্থিতির কাছে সে অসহায় ছিল।
উদ্দীপকের আলমগীর জীবনের প্রতিবন্ধকতার কাছে হেরে যাননি; জীবনকে জয় করেছেন। এ ক্ষেত্রে সুভা তা পারেনি, সে প্রতিনিয়ত নিজের প্রতিবন্ধকতার কাছে হার মেনেছে, নিজেকে অসহায় ডেবেছে। কারণ সে পরিস্থিতির শিকার ছিল। এভাবে উদ্দীপকের আলমগীর হোসেনের পরিস্থিতি ও পরিণতি সুভার পরিণতি থেকে ভিন্ন।
সৃজনশীল ০৯: বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে বেশ উপর থেকে পড়ে যান শিমুল। অনেক চেষ্টার পরও তার দুটি হাত কেটে ফেলা হয়। রোজগেরে শিমুল পরিবারের বোঝা হয়ে ওঠে। সকলের অবহেলা, বঞ্চনায় তার জীবন হয়ে ওঠে মৃত্যুর শামিল। দুপায়ের সাহায্যে কাজ করার চেষ্টায় শুরু হয় তার কঠোর সংগ্রাম। অবলম্বন হিসেবে বেছে নেয় রং ও তুলি। আর বিষয় হয় প্রকৃতি। সাদা ইজেলে রং-তুলির সাহায্যে প্রকৃতিকে বিভিন্নভাবে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমেই খুঁজে পায় জীবনের অর্থ ও সুখ। ছবির প্রকৃতিই হয়ে ওঠে শিমুলের আনন্দের নিরাপদ আশ্রয়।
ক. ‘সুভা’ গল্পের গাভী দুটির নাম কী?
খ. ‘সুভা’ গল্পে “চিরনিস্তব্ধ হৃদয়-উপকূল” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপক ও ‘সুভা’ গল্পের মধ্যে সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ. প্রদত্ত উদ্দীপক ‘সুভা’ গল্পের বিষয়কে পুরোপুরি ধারণ করে কি? যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর।
৯নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সুভা’ গল্পের গাভী দুটির নাম ‘সর্বশী’ ও ‘পাঙ্গুলি’।
খ. “চিরনিস্তব্ধ হৃদয়-উপকূল” বলতে বাক্শক্তিহীন সুভার মনকে বোঝানো হয়েছে। ‘সুভা’ গল্পের গল্পকারের মতে প্রকৃতি যেন সুভার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়, প্রকৃতি সুভার হয়ে কথা বলে। নদীর কলধ্বনি, কোলাহল, মাঝির গান, পাখির ডাক প্রভৃতি যেন সমুদ্রের স্রোতের মতো এসে সুভার চিরনিস্তব্ধ হৃদয়-উপকূলের কাছে এসে ভেঙে পড়ে। মূলত প্রকৃতির হাজারো শব্দ সমারোহের মধ্যে সুভার বাহীন হৃদয় ব্যাকুল হয়। কারণ সে কথা বলতে পারে না। প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা সেই বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘সুভা’ গল্পের কাহিনিগত সাদৃশ্য রয়েছে। আমাদের সমাজে অনেকেই আছে, যারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ। তারা সাধারণত স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম। এর কারণ, তাদের শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতা। তাদের মধ্যে বাক্ প্রতিবন্ধী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রয়েছে। এদের ইচ্ছাশক্তি ও অনুধাবন ক্ষমতা থাকলে সুযোগের অভাবে সমাজে অবদান রাখতে পারে না।
উদ্দীপকে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অঙ্গহানির ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এখানে শিমুল নামের একটি ছেলে বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে অনেক উপর থেকে পড়ে যায়। ফলে তার দুটি হাত কেটে ফেলতে হয়। এই অবস্থায় শিমুল পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সবার অবহেলা আর বঞ্চনায় সে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তখন দুই পায়ের সাহয্যে কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সে ছবি আঁকা রপ্ত করে। প্রকৃতিকে তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলার মধ্যেই সে জীবনের অর্থ ও সুখ খুঁজে পায়। ছবির প্রকৃতিই হয়ে ওঠে তার আনন্দের নিরাপদ আশ্রয়। ‘সুভা’ গল্পের সুভা নামের বোবা মেয়েটিও সংসারে একরকম অবহেলার শিকার। ছেলেমেয়েরা তার সাথে খেলাধুলা পর্যন্ত করে না। এমনকি নিজের মা তাকে ‘গর্ভের কলঙ্ক’ মনে করে। এমন অবস্থায় সে প্রকৃতির কোলে আশ্রয় খুঁজে বেড়ায়। গোয়ালের নির্বাক দুটি অবুঝ গাভী তার পরম বন্ধু হয়ে ওঠে।
সুভার সুখ- দুঃখ যেন গাভী দুটিই সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারে। সংসারে যেদিন তাকে নিয়ে কোনো কথা উঠত, সে কথা সুভা যখন উপলব্ধি বা অনুভব করতে পারত তখন এই দুটি অবলা প্রাণীর কাছে এসে সে আশ্রয় নিত। উদ্দীপকের শিমুলের প্রকৃতির ছবি আঁকা এবং ‘সুভা’ গল্পের প্রধান চরিত্রের গাভী দুটির সঙ্গে মিতালির বিষয়টি একসূত্রে গাঁথা। এভাবেই উদ্দীপক ও ‘সুভা’ গল্পের মধ্যে সাদৃশ্য ফুটে উঠেছে।
ঘ. না, উদ্দীপকটি ‘সুভা’ গল্পের বিষয়কে পুরোপুরি ধারণ করে না। সমাজে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীরা নানাভাবে অবহেলার শিকার হয়। স্বাভাবিক মানুষ যদি তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয় তাহলে তারা স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। উদ্দীপকে দুর্ঘটনায় পতিত একটি ছেলের প্রতিবন্ধী হয়ে পড়া এবং তার জীবনের দুঃখ-কষ্ট তুলে ধরা হয়েছে।
শিমুল নামের এই ছেলেটি বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে অনেক উপর থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। তার দুটি হাত কেটে ফেলতে হয়। দুহাত হারিয়ে সে সমাজ ও পরিবারের বোঝা হয়ে পড়ে। অনেকের কাছে সে চরম অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়। এ অবস্থায় সে নিজের দুই পায়ের সাহায্যে প্রকৃতির ছবি আঁকাকে অবলম্বন হিসেবে বেছে নেয়। এই ছবি আঁকার মধ্যেই সে জীবনের অর্থ ও সুখ খুঁজে পায়। ‘সুভা’ গল্পের প্রধান চরিত্র সুভার কথা বলতে না পারাকেও তার পরিবারের অনেকে মানতে পারে না। সে নিজের অসম্পূর্ণতা নিয়েও সংকোচে থাকে। এমন অবস্থায় বাবার স্নেহ পেলেও শুভা সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মিশতে পারে না। তখন সে কেবল গ্রামেরই এক বেকার যুবক প্রতাপের মাছ শিকার করার সঙ্গী হয় এবং নিজেদের দুটি পোষা গাভী তার একান্ত আপন হয়ে ওঠে।
উদ্দীপকের শিমুলের জীবনকাহিনির সঙ্গে ‘সুভা’ গল্পের সুডার জীবনকাহিনি ও সংগ্রাম আপাতদৃষ্টিতে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও তারা সেই অর্থে পরস্পরের সমগোত্রীয় নয়। তাই বলা যায়, প্রদত্ত উদ্দীপকটি ‘সুভা’ গল্পের বিষয়কে পুরোপুরি ধারণ করে না।
................................................................................................................................................
এসএসসি বাংলা ১ম পত্রের সকল গদ্যের সৃজনশীল প্রশ্নের
উত্তর:-
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : সুভা
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : ঝর্ণার গান
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : বই পড়া
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : অভাগীর স্বর্গ
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : পয়লা বৈশাখ
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : আমার পরিচয়
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : পল্লিসাহিত্য
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : নিমগাছ
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : মমতাদি
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : আম আঁটির ভেঁপু
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : প্রবাস বন্ধু
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : বহিপীর
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : কাকতাডুয়া
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : একাত্তরের দিনগুলি
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : পল্লি জননী
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : জীবন সঙ্গীত
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : সেইদিন এই মাঠ
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : কপোতাক্ষ নদ
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : বঙ্গবাণী
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : রানার
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : মানুষ
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : জুতা আবিষ্কার
►► সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন
0 মন্তব্যসমূহ